এ অধ্যায় পাঠ করে আমরা জানতে পারব-
১. জাতক;
২. জাতকের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব;
৩. শীলমীমাংসা জাতক এবং জনসন্ধ জাতক;
৪. আনন্দ থের এবং মহাপ্রজাপতি গৌতমীর জীবন ও কর্ম;
৫. মহা উপাসিকা বিশাখার জীবন ও কর্ম।
তোমাদের আশেপাশে অনেক মানুষ বসবাস করেন। কেউ পরিচিত কেউবা অপরিচিত। এ যাবৎকালে তোমার দেখা সবচেয়ে ভালো/আদর্শ মানুষ সম্পর্কে লেখো।
নাম- পরিচয়- বক্তব্য
|
** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।
জাতক শব্দটি 'জাত' শব্দ থেকে এসেছে। জাত শব্দের অর্থ হলো জন্ম, উৎপন্ন, উদ্ভুত ইত্যাদি। যিনি জাত বা জন্মগ্রহণ করেছেন, তাকে বলা হয় 'জাতক'। বৌদ্ধ সাহিত্যে গৌতম বুদ্ধের অতীত জীবন কাহিনিগুলো 'জাতক' নামে পরিচিত। বুদ্ধ তাঁর শিষ্যদের ধর্মোপদেশ দেওয়ার সময় ঘটনা প্রসঙ্গে উপদেশ দিতে গিয়ে তাঁর অতীত জন্মের কাহিনি বর্ণনা করতেন। গৌতম বুদ্ধ বোধিজ্ঞান লাভ করার জন্য ৫৫০ বার বিভিন্ন প্রাণী হয়ে জন্মগ্রহণ করেন। এসব জন্মে তিনি কখনো মানুষ, কখনো পশুপাখি, কখনো দেবতারূপে জন্মগ্রহণ করেন। বুদ্ধের এ অবস্থাকে বলা হয় বোধিসত্ত্ব। বোধিসত্ত্বগণ সাধারণত বোধিজ্ঞান লাভের জন্য সাধনা করে থাকেন। বোধিসত্ত্ব অবস্থায় দান, শীল, নৈষ্ক্রম্য, বীর্য, ক্ষান্তি, মৈত্রী, সত্য, ভাবনা, অধিষ্ঠান ও উপেক্ষা এই দশ প্রকার পারমিতা চর্চা করে চরিত্রের চরম উৎকর্ষ সাধন করেন। এর ফলে শেষ জন্মে পূর্ণ প্রজ্ঞাসম্পন্ন হয়ে বোধিজ্ঞান লাভ করেন এবং সম্যক সম্বুদ্ধ নামে অভিহিত হন। জাতক কাহিনিগুলোতে বোধিসত্ত্ব কোনোটিতে প্রধান চরিত্রে, কোনোটিতে পার্শ্বচরিত্রে কোনোটিতে গৌণ চরিত্রে আবার কোনোটিতে তিনি নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন। তবে অধিকাংশ জাতকে তাঁকে মুখ্য ভূমিকায় দেখা যায়।
জাতক কাহিনিগুলোর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, গল্প বলার মাধ্যমে শ্রোতাদের সৎকর্মে উদ্বুদ্ধ করা। গল্পের মাধ্যমে নৈতিক ও মানসিক গুণাবলির বিকাশ সাধন জাতক কাহিনিগুলোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। মানুষ গল্প শুনতে ভালোবাসে। গল্পের মাধ্যমে বর্ণিত বিষয় মানুষের অন্তরের গভীরে রেখাপাত করে। বুদ্ধ ধর্মদেশনার সময় প্রসঙ্গক্রমে তাঁর অতীত জীবনের গল্পগুলোর মাধ্যমে নৈতিক শিক্ষা ও মানবিক গুণাবলি প্রকাশ করতেন। এর প্রভাবে তাঁর শিষ্যরা আদর্শ জীবন গঠনে উদ্বুদ্ধ হতেন। উল্লেখ্য, জাতক কাহিনিগুলোতে অতিপ্রাকৃতের কিছুটা ছাপ থাকলেও জাতকের ঘটনাগুলো একান্তভাবে জীবনসম্পৃক্ত। জাতকের কোনো চরিত্রে বোধিসত্ত্বকে মানবিক চরিত্রের পূর্ণপ্রতীক রূপে প্রতীয়মান হয়। তিনি কোথাও অতি মানবরূপে চিত্রায়িত হননি। জাতকে কোথাও অবান্তর বিষয়ের অবতারণা করা হয়নি।
জাতকের গল্পগুলোর একটি বিশেষ গঠন আছে। প্রতিটি জাতকের গল্পে তিনটি অংশ থাকে। প্রথম অংশে বুদ্ধ যে ঘটনা বা প্রসঙ্গে জাতকটি বলেছেন, তার পরিচয় দেওয়া হয় এটিকে বলা হয় প্রত্যুৎপন্ন বস্তু। দ্বিতীয় অংশে থাকে মূল গল্প বা জাতকের কাহিনি, যাকে বলা হয় অতীতবস্তু। তৃতীয় অংশে দেওয়া হয় ঘটনায় অংশগ্রহণকারীদের বাস্তব পরিচয়, যার নাম সমবধান। এভাবে বুদ্ধের মুখ থেকে তাঁর শিষ্য বা সমসাময়িক ব্যক্তিদের অতীত জন্মের কাহিনিও জানা যায়।
জাতকের গুরুত্ব বিভিন্নমুখী। জাতক সাহিত্য পাঠে ভারতবর্ষের প্রাচীন ইতিহাস, রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, শিল্পকলা, প্রাচীন প্রসিদ্ধ জনপদ ইত্যাদি বিষয়ে জানা যায়। বিশ্বসাহিত্য ভান্ডারে গল্প, উপন্যাস, নাটক, উপাখ্যান, ছোটগল্প প্রভৃতি রচনার উৎস হিসেবেও জাতকের ভূমিকা আছে বলে পণ্ডিতেরা মনে করেন। এজন্য জাতককে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
জাতক প্রাচীন ইতিহাসের এক মূল্যবান ভান্ডার। বুদ্ধযুগের সমাজ ব্যবস্থা, শিক্ষা, শিল্প, সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি, ধর্মদর্শন জানার জন্য জাতক গুরুত্বপূর্ণ।
জাতকের বৈশিষ্ট্যগুলো লেখো
|
** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।
কোশলরাজের অন্নে প্রতিপালিত শীলমীমাংসক নামে এক ব্রাহ্মণ ছিলেন। তিনি ত্রিশরণাগত ছিলেন, সব সময় পঞ্চশীল পালন করতেন। তিনি বেদসহ বিভিন্ন শাস্ত্রে সুপণ্ডিত ছিলেন। কোশলরাজ তাঁকে শীলবান হিসেবে যথেষ্ট সম্মান করতেন। একদিন শীলমীমাংসক ভাবলেন, 'রাজা কী কারণে আমাকে সম্মান করেন, আমার বংশ গৌরবের জন্য নাকি আমার চরিত্রগুণের জন্য, তা জানা দরকার।' এরকম চিন্তা করে একদিন তিনি রাজার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ঘরে ফিরে যাওয়ার সময় রাজার ধনরক্ষকের ধনভান্ডার থেকে এক কার্যাপণ (টাকা) নিয়ে গেলেন। দ্বিতীয় দিন দুই কার্যাপণ নিয়ে গেলেন। ধনরক্ষক এটি দেখেও কিছু বললেন না। পরদিন এক মুষ্টি কার্যাপণ নিয়ে যাবার সময় ধনরক্ষক বললেন, 'আর্য, আপনি পরপর তিন দিন রাজার ধন চুরি করেছেন। 'এরকম বলে তিনি চিৎকার করে বললেন, রাজার ধন হরণকারীকে ধরেছি।' তা শুনে অনেক লোক একত্র হয়ে ব্রাহ্মণকে উত্তমমধ্যম দিয়ে রাজার কাছে নিয়ে গেলেন। রাজা অত্যন্ত দুঃখিত হয়ে বললেন, 'ব্রাহ্মণ, তুমি এমন দুঃশীল কর্মে প্রবৃত্ত হয়েছ কেন?' এরপর রাজকর্মচারীকে নির্দেশ দিলেন, তাঁকে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করার জন্য। তখন ব্রাহ্মণ বললেন, 'মহারাজ, আমি চোর নই। আপনি আমাকে খুবই সম্মান করেন। ভাবলাম, কেন আমাকে সবাই সম্মান করেন- এটি কি আমার বংশ, গোত্র কিংবা চারিত্রিক বিশুদ্ধতার কারণে, তা পরীক্ষা করার জন্য আপনার ধনভান্ডার থেকে অর্থ হরণ করেছিলাম। এখন বুঝতে পেরেছি যে, চারিত্রিক বিশুদ্ধতার জন্যই আমি সবখানে সম্মানিত হচ্ছি, বংশ গোত্রের জন্য নয়। কিন্তু গৃহে অবস্থান করে ভোগসম্পত্তিতে লিপ্ত থেকে জীবনে কখনো চরিত্রবান হতে পারব না। অতএব, আজই জেতবনে বুদ্ধের কাছে গিয়ে আমি প্রব্রজিত হব।'তারপর রাজার অনুমতি নিয়ে ব্রাহ্মণ শ্রাবস্তীতে গিয়ে বুদ্ধের কাছে প্রব্রজ্যা ও উপসম্পদা গ্রহণ করলেন। তিনি অচিরে অর্হত্ত্ব মার্গফলে প্রতিষ্ঠিত হলেন।
ব্রাহ্মণের অর্হত্ত্বলাভের কথা সঙ্ঘমধ্যে প্রচার হলো। তখন ভিক্ষুসঙ্ঘ ধর্মসভায় সমবেত হয়ে আলোচনা করতে লাগলেন, 'দেখ শীলমীমাংসক ব্রাহ্মণ রাজার উপস্থাপক ছিলেন। তিনি নিজের চরিত্রবল পরীক্ষা করতে গিয়ে শেষে রাজসভা ও সংসার ত্যাগ করে অর্হত্ত্বে উপনীত হয়েছে।' এভাবে ব্রাহ্মণের গুণকীর্তন করার সময় ভগবান বুদ্ধ সেখানে উপস্থিত হয়ে তাঁদের কথোপকথন শুনতে পেয়ে বললেন, 'কেবল এই ব্রাহ্মণই যে নিজের চরিত্রবল পরীক্ষাপূর্বক প্রব্রজ্যা গ্রহণ করে মুক্তি লাভ করেছেন তা নয়, পণ্ডিতেরাও অতীতকালে এভাবে করেছিলেন।' এরপর তিনি সেই অতীত কথা বলতে লাগলেন:
অতীতে বারাণসীরাজ ব্রহ্মদত্তের সময় বোধিসত্ত্ব তাঁর পুরোহিত ছিলেন। রাজা অন্যসব ব্রাহ্মণের চেয়ে তাঁকে বেশি সম্মান ও শ্রদ্ধা করতেন। এই রাজপুরোহিতও শীলমীমাংসক ব্রাহ্মণের মতো রাজ ধন হরণ করায় তাঁকে বন্দী করে রাজার কাছে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি দেখতে পেলেন, পথে একস্থানে সাপুড়েরা সাপ নিয়ে খেলা করছে। তারা সাপ নিয়ে নিজেদের গলায় জড়াচ্ছে। তা দেখে ব্রাহ্মণ বললেন, 'ওহে, তোমরা সাপটাকে এমন করে ধরবে না, নিজেদের গলায়ও জড়াবে না; তোমাদের দংশন করতে পারে।' সাপুড়েরা বললেন, 'ঠাকুর, আমাদের সাপ শীলবান ও আচার সম্পন্ন, তোমার মতো দুঃশীল নয়। তুমি দুঃশীল, তাই রাজার ধন চুরি করেছ এবং সেজন্য রাজকর্মচারীরা তোমাকে বেঁধে রাজদরবারে নিয়ে যাচ্ছে।'
এ কথা শুনে বোধিসত্ত্ব ভাবলেন, 'যদি সাপ দংশন বা আঘাত না করে, তাহলেও লোকে তাকে শীলবান বলে, মানুষের তো কথাই নেই। ইহলোকে শীলই শ্রেষ্ঠ। তার চেয়ে উৎকৃষ্ট আর কিছু হতে পারে না।'
বোধিসত্ত্বকে রাজার কাছে নেওয়া হলে রাজা সব বিষয় জেনে তাঁকে শাস্তিদানের নির্দেশ দিলেন। বোধিসত্ত্ব আগের মতো বললেন, 'মহারাজ, আমি চোর নই। চারিত্রিক গুণ পরীক্ষা করার জন্য আমি এই অর্থ চুরি করেছি।
আমি বুঝতে পেরেছি যে, শীলই সর্বোৎকৃষ্ট, শীলের মতো আর কিছু নেই। কায়বাক্য মনে শীল পালন করলে অশেষ কল্যাণ সাধিত হয়।' এভাবে বোধিসত্ত্ব রাজাকে ধর্মতত্ত্ব শিক্ষা দিয়ে সব বিষয় বাসনা ত্যাগ করে প্রব্রজ্যা গ্রহণ করে হিমালয়ের পাদদেশে গিয়ে ধ্যানসাধনা বলে পঞ্চ অভিজ্ঞা ও অষ্ট সমাপত্তি লাভ করেন। মৃত্যুর পরে তিনি ব্রহ্মলোকে উৎপন্ন হন।
সমবধান: তখন রাজপুরোহিত ছিলেন বোধিসত্ত্ব এবং রাজপুরুষরা ছিলেন তাঁর শিষ্য।
উপদেশ: শীলগুনের সমান আর কিছু নেই।
শীলমীমাংসা জাতকে যে যে উপদেশের/মানবীয় গুণের উল্লেখ রয়েছে তার একটি তালিকা তৈরি করো
শীলমীমাংসা জাতক
|
** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।
তুমি শীল মীমাংসা জাতকের যে যে উপদেশের/মানবীয় গুণের তালিকা তৈরি করেছ তার মধ্যে কোন গুণগুলো তুমি পালন করতে চাও এবং কীভাবে পালন করবে তা লেখো।
যে গুণগুলো পালন/চর্চা করতে চাই | কীভাবে পালন/চর্চা করব |
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।
তুমি শীলমীমাংসা জাতকের যে যে উপদেশের/মানবীয় গুণের তালিকা তৈরি করেছ, তার মধ্যে কোন গুণগুলো তুমি তোমার পরিবারে সদস্য/সহপাঠীদের পালন বা চর্চা করতে উদ্বুদ্ধ করবে এবং কীভাবে উদ্বুদ্ধ করবে তা লেখো।
যে গুণগুলো পালন/চর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে চাই | কীভাবে পালন/চর্চায় উদ্বুদ্ধ করব |
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।
প্রত্যুৎপন্ন বস্তু: বুদ্ধ জেতবনে অবস্থান করার সময় কোশলরাজকে উপদেশ দেওয়ার জন্য এ কাহিনি বলেছিলেন। কোশলরাজ একসময় ভোগবিলাসে মত্ত হয়ে রাজকাজে উদাসীন হয়ে পড়েন। ধর্মাচার এবং বিচারকাজ করতেন না, এমনকি বুদ্ধের উপাসনার কথাও ভুলে গিয়েছিলেন। হঠাৎ একদিন বুদ্ধের কথা মনে পড়লে তিনি বুদ্ধকে প্রণাম করতে আসেন। রাজা বুদ্ধকে বন্দনা করে তাঁর উপদেশ প্রার্থনা করেন তাঁর উপদেশ প্রার্থনা করলে সর্বজ্ঞ বুদ্ধ রাজাকে বলেন, রাজকাজে অবহেলা করা উচিত নয়। রাজাদের প্রজাবৎসল হওয়া একান্ত প্রয়োজন। তাছাড়া, রাজা ধার্মিক হলে রাজপুরুষেরাও ধার্মিক হন। রাজ্যে নিরন্তর শান্তি বজায় থাকে। অতীত কালের কোনো কোনো রাজা দশধর্ম পালনসহ রাজ্য শাসন করে মৃত্যুর পর স্বর্গবাসী হয়েছিলেন। কোশলরাজ সে রাজার কথা শোনার জন্য প্রার্থনা করলে বুদ্ধ কাহিনিটি বর্ণনা করলেন।
অতীতবস্তু: অনেক দিন আগে বারানসী রাজ্যে ব্রহ্মদত্ত নামে এক রাজা রাজত্ব করতেন। সে সময় বোধিসত্ত্ব ব্রহ্মদত্ত রাজার পুত্র হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর নামকরণ করা হয় জনসন্ধ। বিদ্যাশিক্ষার বয়স হলে তাঁকে তক্ষশীলায় পাঠানো হয়। সব শিল্পশাস্ত্রে পারদর্শিতা অর্জন করে তিনি বারাণসীতে ফিরে আসেন। পুত্রের সাফল্যে আনন্দিত হয়ে রাজা সকল বন্দিকে মুক্তি দেন। এরপর রাজকুমার জনসন্ধকে অভিষিক্ত করেন উপরাজপদে। তাঁর শাসনে রাজ্যের প্রজাবৃন্দ সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করতে থাকেন।
বোধিসত্ত্ব জনসন্ধের অভিষেকের কয়েক বছর পর রাজার মৃত্যু হয়। প্রজারা বোধিসত্ত্বকে রাজা নির্বাচন করেন। রাজা নগরের চার দ্বারে, মধ্যখানে ও রাজপ্রসাদের কাছে ছয়টি দানশালা নির্মাণ করে প্রতিদিন ছয় লক্ষ মুদ্রা দান দিতেন। রাজার এরকম মহাদান দেখে জম্বুদ্বীপবাসী বিস্মিত হন এবং রাজ্যের প্রজারা খুব সন্তুষ্ট হন। চুরি, ডাকাতি ইত্যাদি অপকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। কোথাও কোনো অপরাধ সংঘটিত হতো না। কারাগার শূন্য হয়ে গেল।
বোধিসত্ত্ব পঞ্চশীল পালন করতেন। অষ্টমী, পূর্ণিমা, অমাবস্যা-তিথিতে উপোসথশীল পালন করতেন। যথানিয়মে রাজ্য শাসন করতেন। রাজা প্রজাসাধারণকে সৎকার্য করায় ও সৎভাবে জীবনযাপনে উপদেশ দিতেন।
একদিন রাজা জনসন্ধ ভাবলেন, প্রজারা যাতে সুখে-শান্তিতে বাস করতে পারেন, তাদের মঙ্গল সাধিত হয় এবং তারা যাতে অপ্রমত্তভাবে জীবন যাপন করেন, তাদের সে রকম কিছু উপদেশ দেব। তিনি ভেরি বাজিয়ে সমগ্র রাজ্যবাসীকে এক জায়গায় সমবেত করলেন। রাজা রাজ্যবাসীকে উদ্দেশ করে বললেন, প্রিয় রাজ্যবাসী! মনোযোগ দিয়ে আমার উপদেশ শোনো এবং সুষ্ঠুরূপে সেসব প্রতিপালন করবে।
১. বাল্যকালে বিদ্যাশিক্ষা করবে।
২. যৌবনকালে ধনসম্পদ উপার্জন করবে।
৩. কূটকর্ম ও কুপ্রবৃত্তি পরিত্যাগ করো।
৪. নিষ্ঠুর ও ক্রোধপরায়ণ হবে না।
৫. মাতা-পিতা ও গুরুজনের সেবা করবে।
৬. গুরুর কাছে শিক্ষা গ্রহণ করবে।
৭. শ্রমণ-ব্রাহ্মণ ও সাধুব্যক্তিকে সম্মান ও গৌরব প্রদর্শন করবে।
৮. প্রাণিহত্যা ও হিংসা থেকে বিরত থাকবে।
৯. অকৃপণভাবে খাদ্যভোজ্য ও পানীয় সামগ্রী দান করবে।
১০. পরপুরুষ বা পরনারীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পরদ্বার লঙ্ঘন করবে না। অপ্রমত্তভাবে দশধর্ম পালন করবে।
উপরের দশটি উপদেশকে 'দশ রাজধর্ম' বা 'দশবিধ কর্তব্য' বলা হয়। রাজা উক্ত দশ রকম উপদেশ দেওয়ার পাশাপাশি নিজেও সৎভাবে জীবন যাপন করতেন এবং ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে রাজকাজ পরিচালনা করতেন।
সমবধান: আমি ছিলাম সে প্রাচীন রাজা জনসন্ধ এবং আমার শিষ্য প্রশিষ্য ছিল পারিষদবর্গ।
উপদেশ: রাজা ধার্মিক হলে প্রজারাও ধার্মিক হন।
জনসন্ধ জাতকে যে যে উপদেশের/মানবীয় গুণের উল্লেখ রয়েছে, তার একটি তালিকা তৈরি করো।
জনসন্ধ জাতক
|
** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।
তুমি জনসন্ধ জাতকের যে যে উপদেশের/মানবীয় গুণের তালিকা তৈরি করেছ তার মধ্যে কোন গুণগুলো তুমি পালন করতে চাও এবং কীভাবে পালন করবে তা লেখো।
যে গুণগুলো পালন/চর্চা করতে চাই | কীভাবে পালন/চর্চা করব |
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।
তোমার পরিবারে সদস্য/সহপাঠীদের পালন বা চর্চা করতে উদ্বুদ্ধ করবে এবং কীভাবে উদ্বুদ্ধ করবে তা লেখো।
যে গুণগুলো পালন/চর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে চাই | কীভাবে পালন/চর্চায় উদ্বুদ্ধ করব |
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।
জনসন্ধ জাতকের আলোকে একজন শাসক কীভাবে রাজ্যশাসন করবেন-লেখো।
একজন শাসকের কী কী গুণ থাকা প্রয়োজন-উল্লেখ করো।
বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাসে কয়েকজন ভিক্ষু-ভিক্ষুণী এবং মহান ব্যক্তির অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। তাঁদের মধ্যে কেউ ধর্মের বিকাশে, কেউ বুদ্ধের জীবনে ও সংঘের সেবায় অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছেন। সেসব শ্রদ্ধেয় ভিক্ষু-ভিক্ষুণী এবং মহান ব্যক্তিবর্গের জীবন ও কাজের বর্ণনাকে চরিতমালা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ চরিতমালা সম্পর্কে জানা প্রত্যেক বৌদ্ধের একান্ত প্রয়োজন।
বৌদ্ধধর্মের প্রচার-প্রসারে থের-থেরীদের অবদান অনেক। ভিক্ষু ও ভিক্ষুণীব্রত নিয়ে যাঁরা দশ বছর অতিক্রম করেন তাঁদের থের বা থেরী বলা হয়। থের শব্দের অর্থ স্থবির, প্রবীণ, জ্ঞানবৃদ্ধ, প্রৌঢ়, বয়োবৃদ্ধ, বয়োজ্যেষ্ঠ ইত্যাদি। থের-থেরী প্রবীণ ভিক্ষু-ভিক্ষুণীর উপাধিবিশেষ। মহৎ কর্মগুণে তাঁরা বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে বিশেষ গৌরবের স্থান অধিকার করে আছেন। সুত্রপিটকের অন্তর্গত খুদ্দক নিকায়ে 'থেরগাথা' ও 'থেরীগাথা' নামে দুটি গ্রন্থ আছে, সেখানে থের ও থেরীদের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতাসমূহ গাথা ছন্দে বর্ণনা করা হয়েছে। তাঁদের এসব অভিজ্ঞতা পাঠকের চিত্তকে বিস্মিত ও অভিভূত করে তোলে। থের-থেরীদের জীবন ও গাথাগুলো আমাদের নৈতিক জীবন গঠনে উদ্বুদ্ধ করে। বৌদ্ধধর্মের বিকাশে তাঁদের অবদান অবিস্মরণীয়। জীবনকে ধর্মীয় ভাবধারায় গড়ে তোলার জন্য থের-থেরী ও বরেণ্য মনীষীদের জীবনচরিত পাঠ করা উচিত। এ পর্যায়ে আমরা আনন্দ থের ও মহাপ্রজাপতি গৌতমী থেরীর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানব।
আনন্দ ছিলেন সিদ্ধার্থ গৌতমের পিতৃতুল্য অমিতোদন শাক্যের পুত্র। সিদ্ধার্থ ও আনন্দ একইদিনে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মে পরিবারে খুব আনন্দ হয়েছিল বলে তাঁর এই নাম রাখা হয়। আনন্দ অনুরুদ্ধ, ভদ্রীয়, কিম্বিল, দেবদত্ত এবং ক্ষৌরকার পুত্র উপালি একইদিনে বুদ্ধের কাছে ভিক্ষু সঙ্ঘে দীক্ষিত হন।
উপসম্পদা গ্রহণের পর তিনি পুন্ন মস্তানি পুত্রের কাছে ধর্মকথা শুনে স্রোতাপত্তি ফল লাভ করেন।
বুদ্ধের প্রিয় শিষ্য, স্মৃতিধর এবং সুদেশক হিসেবে আনন্দের সুখ্যাতি ছিল সর্বজনবিদিত। তাঁর শান্ত স্বভাব ও অমায়িক ব্যবহারের জন্য সব ভিক্ষুর কাছে তিনি খুবই প্রিয় ছিলেন; সাধারণ উপাসক-উপাসিকার কাছেও ছিলেন শ্রদ্ধার পাত্র। তাঁকে সবাই সমানভাবে বিশ্বাস করতেন।
বুদ্ধত্ব লাভের পর বহু বছর ধরে বুদ্ধের কোনো স্থায়ী সেবক ছিলেন না। নাগসামাল, নাগিত, উপবান, সুনক্ষত্র, চুন্দ, সাগত প্রমুখ ভিক্ষুরা অস্থায়ীভাবে তাঁর সেবা করছিলেন। বুদ্ধের বয়স যখন ৫৫ বছর, তখন একবার ধর্মসভায় বুদ্ধের স্থায়ী সেবক নিযুক্ত করার প্রশ্ন ওঠে। তখন সারিপুত্র-মৌদাল্যায়ন প্রমুখ খ্যাতনামা ভিক্ষু এ পদের প্রার্থী হন। কিন্তু বুদ্ধ কারো প্রার্থনা অনুমোদন করেননি। তখন সেবক পদের জন্য আনন্দ স্থবিরের নাম প্রস্তাবিত হলে আনন্দ নিম্নোক্ত শর্ত সাপেক্ষে সেবক পদ গ্রহণে সম্মত হন। শর্তগুলো যথাক্রমে-
১. বুদ্ধের প্রাপ্ত চীবর আনন্দকে প্রদান করবেন না।
২. বুদ্ধের প্রাপ্ত পিন্ডপাত আনন্দকে দেবেন না।
৩. বুদ্ধ আনন্দকে গন্ধকুটিরে থাকতে বলবেন না।
৪. আনন্দের গৃহীত নিমন্ত্রণে বুদ্ধ গমন করবেন।
৫. আনন্দ যে-কোনো সময় আগন্তুক নিয়ে বুদ্ধের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন।
৬. ধর্ম বিষয়ে জানার জন্য আনন্দ যেকোনো সময়ে বুদ্ধের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন।
৭. আনন্দের অনুপস্থিতিতে বুদ্ধ কর্তৃক দেশিত উপদেশসমূহ আনন্দকে পুনর্ব্যক্ত করবেন।
আনন্দ বুদ্ধের সেবকপদ গ্রহণ করে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে কর্তব্যগুলো পালন করতেন। তিনি প্রতিদিন দুই প্রকার জল ও তিন প্রকার দন্তকাষ্ঠ বুদ্ধকে দিতেন। তিনি বুদ্ধের শরীর পরিষ্কার করে দিতেন। এ ছাড়া গন্ধকুটির পরিচ্ছন্ন, প্রদীপ প্রজ্জ্বালন ইত্যাদি কাজও করতেন। দিনের বেলায় গন্ধকুটিরে অবস্থান করে রাতে প্রদীপ হাতে নয়বার গন্ধকুটির প্রদক্ষিণ করতেন। কারণ, বুদ্ধের প্রয়োজনে তিনি যেন উপস্থিত হতে পারেন। তিনি এভাবে বুদ্ধের পরিনির্বাণ লাভের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত সেবা করেছিলেন। বুদ্ধ আনন্দ স্থবিরের ধীশক্তির প্রশংসা করে তাঁকে 'ধর্মভান্ডাগারিক' পদে অভিষিক্ত করেন। আনন্দ একাগ্রচিত্তে বুদ্ধের উপদেশ শুনতেন এবং খুব মধুরভাবে সেসব উপদেশ বুঝিয়ে দিতে পারতেন। বুদ্ধ একসময় ভিক্ষুসঙ্ঘকে আহ্বান করে বলেছিলেন, ভিক্ষুগণ! আনন্দের চারটি অদ্ভুত গুণ আছে। তা হলো: ১. আনন্দকে দর্শন করলে ভিক্ষুগণ তৃপ্তিবোধ করেন, ২. আনন্দ ধর্ম ভাষণ করলে ভিক্ষুগণ পরম তৃপ্তি লাভ করেন, ৩. আনন্দের সঙ্গে কথা বলে ভিক্ষুগণ পরিতৃপ্ত হন এবং ৪. ভিক্ষু-ভিক্ষুণী ও উপাসক-উপাসিকাগণ আনন্দকে দেখে পরম তৃপ্তি লাভ করেন।
উল্লেখ্য, বৌদ্ধ ভিক্ষুণীসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠায় আনন্দ স্থবিরের অবদান ছিল অবিস্মরণীয়। রাজা শুদ্ধোদনের মৃত্যুর পর শাক্য ও কোলিয়দের মধ্যে রোহিণী নদীর জল নিয়ে বিবাদ হয়েছিল। বুদ্ধ বিবাদ মীমাংসার জন্য বৈশালী থেকে কপিলাবস্তু আসেন। বিবাদ মীমাংসা করে বুদ্ধ তাদেরকে কলহবিবাদ সূত্র দেশনা করেন। দেশনা শুনে পাঁচ শ শাক্যকুমার উপসম্পদা গ্রহণ করেন। তাঁদের স্ত্রীগণ মহাপ্রজাপতি গৌতমীর নেতৃত্বে বুদ্ধের কাছে উপস্থিত হয়ে ভিক্ষুণীব্রত গ্রহণ করার প্রার্থনা জানান। কিন্তু বুদ্ধ তাঁদের প্রার্থনা প্রত্যাখ্যান করে বৈশালীতে গমন করেন। মহাপ্রজাপতি গৌতমীসহ পাঁচশ জন সহচারিণী হতাশ না হয়ে মস্তক মুন্ডিত করে কাষায়বস্তু পরে করে খালি পায়ে বৈশালীতে উপস্থিত হন। এখানেও বুদ্ধ নারীদের ভিক্ষুণী ধর্মে দীক্ষা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আনন্দ স্থবির ভগবান বুদ্ধকে তাঁর বিমাতা মহাপ্রজাপতি গৌতমীর বিভিন্ন উপকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাঁদের দীক্ষা দেওয়ার অনুরোধ জানান। আনন্দের অনুরোধক্রমে বুদ্ধ মহাপ্রজাপতি গৌতমীসহ পাঁচশ শাক্য নারীকে উপসম্পদা করে ভিক্ষুণী সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠা করেন।
বুদ্ধ শেষ জীবনে বৈশালীর চাপাল চৈত্যে অবস্থান করার সময় পাপমতি মারের অনুরোধে আয়ু সংস্কার বর্জন করেন। মাত্র তিন মাস পর বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে বুদ্ধ পরিনির্বাপিত হবেন জানতে পেরে আনন্দ অত্যন্ত শোকাভিভূত হলেন। বুদ্ধ আনন্দকে ডেকে বললেন, 'আনন্দ, তুমি শোক করবে না। আমি কি তোমাকে বলিনি যে, জগৎ অনিত্য, দুঃখ ও অনাত্ম। সকলে প্রিয়বস্তু থেকে পৃথক হবে। সকল সংস্কার অনিত্য। তৃষ্ণা আর অবিদ্যার কারণে বারবার জন্মগ্রহণ করতে হয়। আনন্দ, তুমি মহাপুণ্যাত্মা, উদ্যম করো, মনোযোগ দিয়ে জ্ঞান সাধনায় আত্মনিয়োগ করো। তুমি অচিরে আসবক্ষয় করে অর্থলাভে সক্ষম হবে।'
বুদ্ধের পরিনির্বাণ লাভের পরে রাজগৃহে সপ্তপর্ণি গুহায় যে প্রথম বৌদ্ধ সঙ্গীতি হয়, তাতে আনন্দ স্থবিরের অসাধারণ অবদান ছিল। সপ্তপর্ণি গুহায় ৫০০ জন অর্হৎ ভিক্ষুর উপস্থিতিতে বুদ্ধবাণী সংগ্রহ করার জন্য এক মহাসম্মেলন বা সঙ্গীতি আহ্বান করা হয়। নির্বাচিত ভিক্ষুদের মধ্যে আনন্দ স্থবির ছাড়া সকলেই ছিলেন অর্হৎ। আনন্দ সঙ্গীতি অধিবেশনের আগের দিন সারা রাত ধ্যান-সমাধিতে নিমগ্ন হয়ে অর্হত্ত্বফল লাভে সক্ষম হন।
যথাসময়ে সঙ্গীতির অধিবেশন শুরু হবার আগে নির্বাচিত ভিক্ষুগণ নিজ নিজ আসনে উপবেশন করলেন। শুধু আনন্দের আসন শূন্য ছিল। অধিবেশন শুরুর পূর্বমুহূর্তে আনন্দ ঋদ্ধিশক্তির প্রভাবে তাঁর জন্য নির্ধারিত আসনে উপবেশন করলেন। এ অত্যাশ্চর্য ঘটনা দেখে সব ভিক্ষু সাধুবাদ দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানালেন। মহাকাশ্যপের সভাপতিত্বে সঙ্গীতির কার্যক্রম শুরু হয়। এই সঙ্গীতিতে উপালি স্থবির বিনয় এবং আয়ুষ্মান আনন্দ স্থবির সমগ্র সূত্র (অভিধর্মসহ) আবৃত্তি করেন। এভাবে আনন্দ স্থবির বুদ্ধবাণী সংরক্ষণে অবদান রেখেছিলেন।
আনন্দ থেরর গুণের তালিকা তৈরি করো
|
** জায়গায় না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।
তুমি আনন্দ থেরর যে যে মানবীয় গুণের তালিকা তৈরি করেছ, তার মধ্যে কোন গুণগুলো তুমি পালন করতে চাও এবং কীভাবে পালন করবে তা লেখো।
যে গুণগুলো পালন/চর্চা করতে চাই | কীভাবে পালন/চর্চা করব |
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।
তুমি আনন্দ থেরর মানবীয় গুণের তালিকা তৈরি করেছ তার মধ্যে কোন গুণগুলো তুমি তোমার পরিবারে সদস্য/সহপাঠীদের পালন বা চর্চা করতে উদ্বুদ্ধ করবে এবং কীভাবে উদ্বুদ্ধ করবে তা লেখো।
যে গুণগুলো পালন/চর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে চাই | কীভাবে পালন/চর্চায় উদ্বুদ্ধ করব |
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।
মহাপ্রজাপতি গৌতমী দেবদহে সুপ্রবুদ্ধের পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন সিদ্ধার্থ গৌতমের মাতা মহামায়ার ছোট বোন। মহামায়ার মৃত্যুর পর রাজা শুদ্ধোদন মহাপ্রজাপতি গৌতমীকে বিয়ে করেছিলেন। জ্যোতিষীরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তাঁদের সন্তানেরা রাজচক্রবর্তী রাজা হবেন। সিদ্ধার্থ গৌতমের জন্মের সপ্তাহকাল পর তাঁর মাতা মহামায়ার মৃত্যু হয়। মহাপ্রজাপতি গৌতমীই সিদ্ধার্থের লালন-পালনের ভার নেন।
রাজা শুদ্ধোদন যথাকালে মৃত্যুবরণ করলে মহাপ্রজাপতি গৌতমী সংসারের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে ভিক্ষুণীব্রত গ্রহণ করার সংকল্প করেন। এ সময় কপিলাবস্তুতে পাঁচশত শাক্যকুমার বুদ্ধের কাছে ভিক্ষুধর্মে দীক্ষা নেন। তাঁদের স্ত্রীরা মহাপ্রজাপতি গৌতমীর নেতৃত্বে বুদ্ধের কাছে উপস্থিত হয়ে ভিক্ষুণীব্রত গ্রহণ করার অনুমতি চান। কিন্তু বুদ্ধ তাঁদের প্রার্থনা প্রত্যাখ্যান করে বৈশালীতে চলে যান। মহাপ্রজাপতি গৌতমী ও তাঁর সহচারিণী শাক্য নারীরা হতাশ না হয়ে মস্তক মুণ্ডন করে কাষায়বস্তু পরে হেঁটে বৈশালীতে পৌঁছেন। বুদ্ধ তখন বৈশালীর মহাবনের কুটাগার শালায় অবস্থান করতেন। মহাপ্রজাপতি গৌতমী তাঁর অনুগামী শাক্যনারীসহ ক্লান্ত ও শ্রান্ত দেহে মহাবনের কূটাগারে উপস্থিত হন। আনন্দ স্থবির বুদ্ধকে বললেন, প্রভু ভগবান, মহাপ্রজাপতি গৌতমী তোরণের বাইরে স্ফীত পদে, ধূলিধূসরিত অবস্থায় বিষণ্ণ মনে এবং সজল চোখে দাঁড়িয়ে আছেন। আপনি মহাপ্রজাপতি গৌতমীসহ নারীদের প্রব্রজ্যা গ্রহণের অনুমতি দিন। আনন্দের প্রার্থনা পর পর তিনবার প্রত্যাখ্যাত হলে আনন্দ পুনর্বার বিনীতভাবে বললেন, বুদ্ধ, যদি নারীরা সংসার ত্যাগ করে বুদ্ধের অনুশাসন মান্য করে ধ্যান সাধনায় রত হয়, তাহলে তারা কী আসবক্ষয় সাধন করতে সক্ষম হবে না? বুদ্ধ বললেন, সে শক্তি তাঁদেরও আছে। আনন্দ বললেন, তা যদি হয়, তাহলে প্রভু মহাপ্রজাপতি গৌতমী আপনার বিমাতা। আপনার মাতার মৃত্যুর পর তিনি মাতৃস্নেহে আপনাকে পরম আদরে লালন-পালন করেছেন। অতএব নারীদের সংসারধর্ম ত্যাগ করে তথাগতের নিয়ম ও অনুশাসন পালন পূর্বক ভিক্ষুণীধর্ম গ্রহণের অনুমতি দান করুন। বুদ্ধ নীতিগতভাবে আনন্দের আবেদন অনুমোদন করলেন। বললেন, নারীরা শাসনে প্রব্রজিত হতে হলে আটটি শর্ত আজীবন প্রতিপালন করতে হবে। এই শর্তগুলোকে অষ্ট গুরুধর্ম বলা হয়। মহাপ্রজাপতি গৌতমীসহ উপস্থিত শাক্য নারীরা সানন্দে অষ্টগুরু ধর্ম মেনে নিলেন। এরপর মহাপ্রজাপতি গৌতমীসহ পাঁচশত শাক্যনারীকে সঙ্ঘভুক্ত করা হলো। প্রতিষ্ঠিত হলো ভিক্ষুণীসঙ্ঘ।
উপসম্পদা লাভের পর মহাপ্রজাপতি গৌতমী বুদ্ধের কাছে গমন করে পূজা ও বন্দনা করলেন। বুদ্ধ তাঁকে ধর্মোপদেশ দিয়ে কর্মস্থান প্রদান করেন। তিনি অনতিবিলম্বে অর্হত্ত্বফল লাভ করেন। তাঁর অপর সহচারিণীগণ জেতবনে বুদ্ধের কাছে নন্দকোবাদ সূত্র শ্রবণ করে অর্হত্ত্ব ফল লাভ করেন। বুদ্ধ মহাপ্রজাপতি গৌতমীকে থেরীদের মধ্যে প্রধান এবং জ্ঞানে-গুণে শ্রেষ্ঠ বলে ঘোষণা করেন।
মহাপ্রজাপতি গৌতমী বৈশালীতে অবস্থানকালে বুদ্ধের অনুমতি নিয়ে ১২০ বছর বয়সে পরিনির্বাণ লাভ করেন। কথিত আছে, বুদ্ধের পরিনির্বাণের সময় যেরকম অদ্ভুত ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল, মহাপ্রজাপতি গৌতমীর পরিনির্বাণের সময়ও সেরকম সংঘটিত হয়েছিল। যেমন: সকলের প্রার্থনার পর শ্মশানে স্বয়ং অগ্নি প্রজ্বলিত হয়ে ওঠে। মহাপ্রজাপতি গৌতমী ছিলেন ভিক্ষুণীসঙ্ঘের অভিভাবিকার মতো। সকল ভিক্ষুণীর প্রতি তাঁর সমান নজর ছিল। তাঁদের সুবিধা-অসুবিধার প্রতি তাঁর সযত্ন দৃষ্টি থাকত। কোনো অসুবিধা হলে তা নিরসনে বুদ্ধের নির্দেশক্রমে ব্যবস্থা নিতেন। অর্হত্ত্ব লাভের পর মহাপ্রজাপতি গৌতমী মনের আনন্দে অনেক প্রীতিগাথা ভাষণ করেছিলেন।
নিচে তাঁর ভাষিত কয়েকটি গাথার বাংলা অনুবাদ দেওয়া হলো:
১. জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ সত্তা লোকশ্রেষ্ঠ বুদ্ধবীরকে নমস্কার। তিনি আমার এবং বহুজনের দুঃখ মোচন করেছেন।
২. সকল দুঃখের কারণ আমার জ্ঞাত হয়েছে। অশুভের হেতু তৃষ্ণা আমার এখন দু রীভূত হয়েছে। আমি দুঃখনিবৃত্তির কারণ আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গে বিচরণ করছি।
৩. পরিপূর্ণ জ্ঞানের অভাবে আমি ইতিপূর্বে লক্ষ্যহীনভাবে মাতা, পিতা, পুত্র, ভাই, মাতামহীরূপে কতবার জন্ম গ্রহণ করেছি।
৪. তথাগতের দর্শনে আমি তৃষ্ণামুক্ত হয়েছি, এ দেহই আমার অন্তিম দেহ। জন্মান্তর রোধ হয়েছে। আমার আর পুনর্বার জন্ম হবে না।
৫. সব সময় শ্রাবক সঙ্ঘের দিকে লক্ষ্য রাখবে। তাঁরা দৃঢ় পরাক্রমশালী, ধ্যানপরায়ণ ও বীর্যবান। তাঁরা সঙ্ঘবদ্ধভাবে বিচরণশীল। তাঁদের পথ অনুসরণ করবে।
৬. কী আশ্চর্য! বহুজনের হিত ও কল্যাণার্থে মহামায়া সিদ্ধার্থকে প্রসব করেছিলেন। সত্যিই তিনি বহুগুণের অধিকারী। সেই গৌতম জরা, ব্যাধি, মৃত্যুর হাত থেকে সকল প্রাণীকে রক্ষা করেছেন এবং সকল দুঃখের বিনাশ সাধন করেছেন।
মহাপ্রজাপতি গৌতমীর গুণের তালিকা তৈরি করো
|
** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।
তুমি মহাপ্রজাপতি গৌতমীর যে যে মানবীয় গুণের তালিকা তৈরি করেছ, তার মধ্যে কোন গুণগুলো তুমি পালন করতে চাও এবং কীভাবে পালন করবে তা লেখো।
যে গুণগুলো পালন/চর্চা করতে চাই | কীভাবে পালন/চর্চা করব |
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।
তুমি মহাপ্রজাপতি গৌতমীর মানবীয় গুণের তালিকা তৈরি করেছ, তার মধ্যে কোন গুণগুলো তুমি তোমার পরিবারে সদস্য/সহপাঠীদের পালন বা চর্চা করতে উদ্বুদ্ধ করবে এবং কীভাবে উদ্বুদ্ধ করবে তা লেখো।
যে গুণগুলো পালন/চর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে চাই | কীভাবে পালন/চর্চায় উদ্বুদ্ধ করব |
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।
বুদ্ধের সময়ে অঙ্গদেশের ভদ্দিয় নগরে মেণ্ডক নামে একজন ধনাঢ্য শ্রেষ্ঠী ছিলেন। ধনঞ্জয় নামে তাঁর এক পুত্র ছিল। ধনঞ্জয়ের স্ত্রীর নাম সুমনাদেবী। বিশাখা, ধনঞ্জয় শ্রেষ্ঠী ও সুমনাদেবীর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। বিশাখার সাত বছর বয়সে ভগবান বুদ্ধ ১,২৫০ ভিক্ষুসঙ্ঘসহ ভদ্দিয় নগরে আসেন। তখন মেণ্ডক শ্রেষ্ঠী তাঁর নাতনি বিশাখা ও তাঁর পাঁচ শ সখীসহ বুদ্ধকে অভ্যর্থনা জানাতে যান। বুদ্ধ বিশাখার মানসিক অবস্থা অনুযায়ী ধর্মদেশনা করলেন। ধর্মদেশনা শুনে মেণ্ডক শ্রেষ্ঠী, বিশাখা ও পাঁচশ সখী স্রোতাপত্তি ফল লাভ করেন। বিশাখা সেদিন থেকে টানা আটমাস বুদ্ধ প্রমুখ ভিক্ষু সঙ্ঘকে খাদ্যভোজ্য দিয়ে সেবা করেছিলেন।
সে সময় শ্রাবন্তীতে মিগার নামের এক শ্রেষ্ঠী ছিলেন। পুণ্যবর্ধন নামে তাঁর এক বিবাহযোগ্য পুত্র ছিল। তাঁর জন্য সর্বগুণে গুণবতী বিশাখাকে স্ত্রী নির্বাচন করা হয়। বিশাখার বিবাহ উৎসব তাঁর পিতার বাড়িতে চার মাস ধরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার সময় বিশাখার পিতা ধনঞ্জয় শ্রেষ্ঠী তাঁকে দশটি মূল্যবান উপদেশ দিয়েছিলেন। যেমন-
১. ঘরের আগুন বাইরে নিও না; অর্থাৎ শ্বশুরবাড়ির কারো দোষ দেখলে তা কখনো বাইরে কারো কাছে প্রকাশ করবে না।
২. বাইরের আগুন ঘরে আনবে না; অর্থাৎ প্রতিবেশী কেউ তোমার শ্বশুরবাড়ির কারো নিন্দা করলে তা শ্বশুরবাড়ির কারো নিকট প্রকাশ করো না।
৩. যে দেয় তাকে দেবে; অর্থাৎ যে ব্যক্তি কোনো কিছু ধার নিয়ে ফেরত দেয়, তাকে দেবে।
৪. যে দেয় না তাকে দেবে না; অর্থাৎ যে কোনো কিছু ধার নিয়ে ফেরত দেয় না, তাকে দেবে না;
৫. যে দেয় অথবা দেয় না তাকেও দেবে; অর্থাৎ কোনো দরিদ্র আত্মীয় ধার নিয়ে ফেরত দিতে না পারলেও তাকে ধার দেবে।
৬. সুখে উপবেশন করবে; অর্থাৎ এমন স্থানে উপবেশন করবে যাতে গুরুজন এলে উঠতে না হয়।
৭. সুখে আহার করবে; অর্থাৎ গুরুজনদের আহার শেষে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের খবরাখবর নিয়ে আহার করবে।
৮. সুখে শয়ন করবে; অর্থাৎ যাবতীয় গৃহকাজ শেষ করে গুরুজনদের শয়নের পর নিজে শয়ন করবে।
৯. অগ্নি পরিচর্যা করবে; অর্থাৎ গুরুজনদের সেবা-শুশ্রুষা করবে।
১০. গৃহদেবতাকে নমস্কার করবে অর্থাৎ স্বামী শ্বশুর-শাশুড়িসহ গুরুজনকে দেবতার মতো শ্রদ্ধা করবে।
ধনঞ্জয় শ্রেষ্ঠী পরদিন বিশাখাকে নয় কোটি স্বর্ণমুদ্রা মূল্যের মহালতা প্রসাধন হার, স্নানচূর্ণের ব্যয় নির্বাহের জন্য চুয়ান্ন শকটপূর্ণ অন্যান্য সামগ্রী, পাঁচশ দাসী, একশ অশ্বযান, বহু গাভিসহ গৃহকর্মের সামগ্রী দিয়ে শ্বশুরবাড়িতে পাঠালেন। শ্বশুরবাড়িতে বিশাখা যাবতীয় কাজ নিজে করতেন। তাঁর অমায়িক ব্যবহারে সবাই মুগ্ধ হলেন।
বিশাখার শ্বশুর এবং পরিবারের সদস্যরা ছিলেন নিগ্রন্থ-সন্ন্যাসীদের অনুসারী। বিশাখার বিবাহ উৎসব মিগার শ্রেষ্ঠীর বাড়িতে এক সপ্তাহ ধরে চলে। সপ্তম দিনে মিগার শ্রেষ্ঠী নিগ্রন্থ-সন্ন্যাসীদের আহ্বান করে পূজা সৎকারের আয়োজন করলেন। বিশাখাকে এসব সন্ন্যাসীকে পূজা বন্দনা করার জন্য বললে, তিনি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন এবং বললেন, এসব উলঙ্গ সন্ন্যাসী কি কখনো অর্হৎ হতে পারে? ছিঃ ছিঃ! এরূপ বলে বিশাখা সে স্থান ত্যাগ করলেন। বিশাখার এরকম ব্যবহারে সন্ন্যাসীরা ক্রুদ্ধ হয়ে শ্রেষ্ঠীকে বললেন, আপনার এই পুত্রবধূ শ্রমণ গৌতমের শিষ্য, তাঁকে অচিরে ঘর থেকে তাড়িয়ে দিন। তা না হলে আপনার মহাসর্বনাশ হবে।একদিন এক অর্হৎ ভিক্ষু মিগার শ্রেষ্ঠীর বাড়িতে ভিক্ষার জন্য বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু কেউ ভিক্ষা দিলেন না। বিশাখা বললেন, প্রভু, আমার শ্বশুর বাসি খাবার খাচ্ছেন; আপনি অন্যত্র ভিক্ষা করুন। বিশাখার কথায় মিগার শ্রেষ্ঠী ভীষণ রুষ্ট হয়ে বললেন, বিশাখা, তুমি আমার কুলগুরুকে অপমান করেছ। বাসি খাবার খাই বলে আজ আমাকে অপমান করেছ; তুমি আমার বাড়ি থেকে চলে যাও।
বিশাখা বললেন, বাবা, আমি ক্রীতদাসী নই। ইচ্ছা করলে আমাকে তাড়িয়ে দেওয়া যায় না। আমার পিতা আটজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিকে আমার দোষাদোষের বিচার ও প্রতিকার করার জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তাঁদের আহ্বান করে আমার দোষগুণ বিচার করুন। বিচারে আমি দোষী হলে আমি চলে যাব। এরপর আটজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিকে আহ্বান করা হলো। তাঁরা এলে বিশাখা বললেন, আমার শ্বশুর বাসি খাবার খাচ্ছেন বলার অর্থ এই যে, তিনি পূর্বজন্মের পুণ্যফলের প্রভাবে এ জন্মে বিপুল ভোগসম্পত্তির অধিকারী হয়েছেন। তিনি এ জন্মে যা ভোগ করছেন তা পূর্বজন্মের কৃতকর্মের ফল এ অর্থে এ জন্মের ভোগসম্পদ সবই বাসি। মিগার শ্রেষ্ঠী জানতে চাইলেন বিশাখার পিতা যে রূপক অর্থে দশটি উপদেশ দিয়েছিলেন, তার ব্যাখ্যা কী। বিশাখা সব কয়টির অন্তর্নিহিত ব্যাখ্যা প্রদান করলে মিগার শ্রেষ্ঠী নিজের ভুল বুঝতে পারেন। তখন বিশাখা বললেন, এখন আমি পিতৃগৃহে চলে যেতে চাই। মিগার শ্রেষ্ঠী নিজের দোষ স্বীকার করে বিশাখাকে থাকতে অনুরোধ করেন। বিশাখা বললেন, আপনি উলঙ্গ সন্ন্যাসীদের পূজারি, আমি অর্হৎ সম্যক সম্বুদ্ধ ও সুসমাহিত ভিক্ষুসঙ্ঘের উপাসিকা। যদি আমাকে ইচ্ছামতো বুদ্ধ প্রমুখ ভিক্ষুসঙ্ঘকে দান দিতে ও সদ্ধর্ম শোনার সুযোগ দেন, তাহলে আমি থাকতে পারি। মিগার শ্রেষ্ঠী তাতে সম্মত হলেন।
বিশাখা পরদিনের জন্য বুদ্ধ প্রমুখ ভিক্ষুসঙ্ঘকে তাঁর বাড়িতে নিমন্ত্রণ করলেন। বুদ্ধসহ ভিক্ষুসঙ্ঘ পরদিন মিগার শ্রেষ্ঠীর বাড়িতে এসে নির্দিষ্ট আসনে উপবেশন করলেন। খাদ্য ভোজ্যসহ দানীয় সামগ্রী সাজানো হলো। পরিবেশন করার জন্য মিগার শ্রেষ্ঠীকে আহ্বান করা হলো। কিন্তু তিনি সন্ন্যাসীদের বাধার কারণে এলেন না। এরপর বিশাখা পরিপাটিরূপে বুদ্ধ ও ভিক্ষুসঙ্ঘকে আহার পরিবেশন করার পর শ্বশুরকে ধর্মবাণী শোনার জন্য আহ্বান করলেন। সন্ন্যাসীদের পরামর্শক্রমে বুদ্ধবাণী শোনার জন্য তিনি পর্দার আড়ালে বসলেন। বুদ্ধ বললেন, শ্রেষ্ঠী, তুমি পৃথিবীর যেখানেই থাকো না কেন, আমার উপদেশ শুনতে পাবে। এই বলে বুদ্ধ ধর্মদেশনা শুরু করলেন। বুদ্ধের ধর্ম শুনে শ্রেষ্ঠী শ্রোতাপত্তি ফল লাভ করলেন, তাঁর মিথ্যাদৃষ্টি দূর হলো। তারপর তিনি বুদ্ধের সামনেই পুত্রবধূ বিশাখাকে বললেন, মা, আজ থেকে আমি তোমাকে মাতৃস্থানে স্থাপন করলাম। তুমি আমাকে জ্ঞানচক্ষু দান করেছ। আজ থেকে তুমি আমার মায়ের মতো। সেই থেকে বিশাখা 'মিগার মাতা' নামে পরিচিত হলেন। মিগার শ্রেষ্ঠী বুদ্ধশাসনের উন্নতির জন্য ৪০ কোটি স্বর্ণমুদ্রা ব্যয় করেছিলেন। বিশাখা প্রতিদিন তিনবার ভোজ্যদ্রব্য ও পূজার উপকরণ নিয়ে বিহারে যেতেন। বুদ্ধের কাছে তিনি আটটি বর নিয়েছিলেন। সেগুলো হলো-
১. বুদ্ধের কাছে কোনো আগন্তুক ভিক্ষু এলে বিশাখাকে জানাবেন, বিশাখা তাঁর থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করবেন।
২. বিশাখা আজীবন প্রতিদিন পাঁচশ ভিক্ষুর আহার দান করবেন।
৩. বিশাখা অসুস্থ ভিক্ষুর যাবতীয় চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করবেন।
৪. বিশাখা অসুস্থ ভিক্ষুর সেবক-সেবিকারও ভরণ-পোষণ করবেন।
৫. বিশাখা যে পাঁচশ ভিক্ষুর খাদ্যভোজ্য দান করবেন বুদ্ধও তা গ্রহণ করবেন।
৬. প্রতি বর্ষাবাসের সময় বিশাখা বুদ্ধ এবং পাঁচশ ভিক্ষুকে বর্ষাসাটিকাসহ অষ্টপরিষ্কার দান করবেন।
৭. বিহারের আবাসিক ভিক্ষুদের যত ওষুধ প্রয়োজন সব ওষুধ বিশাখা সরবরাহ করবেন।
৮. বিশাখা প্রতিবছর সকল ভিক্ষুকে 'কুণ্ডু প্রতিচ্ছাদন' নামক পরিধেয় বস্ত্র দান করবেন।
বিশাখা কোনো সময় বিহারে বুদ্ধদর্শনে গিয়ে ভুলবশত তাঁর মহালতা প্রসাধন হারটি বিহারে রেখে এসেছিলেন। পরে সেটি ফেরৎ পেলে বিশাখা এ হারের সমমূল্য পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে বিহার নির্মাণ করে দান দেওয়ার সংকল্পবদ্ধ হলেন। নয় কোটি স্বর্ণমুদ্রা ব্যয় করে বিশাখা বিহারের পূর্ব পাশে হাজার প্রকোষ্ঠযুক্ত পূর্বারাম বিহার ও গন্ধকুটি নির্মাণ করে বুদ্ধ প্রমুখ ভিক্ষুসঙ্ঘকে দান করেন। বিশাখা প্রতিদিন ভিক্ষুদের জন্য খাদ্যভোজ্য নিয়ে সকালে একবার এবং ওষুধপথ্য ও অষ্টবিধ পানীয় নিয়ে বিকেলে একবার বিহারে গিয়ে ধর্ম শ্রবণ করতেন। বিশাখা • ছিলেন পৃথিবীর নারী সমাজের আদর্শ। একটি সুন্দর ও আদর্শ পরিবার গঠনে বিশাখার মতো সতীসাধ্বী নারীর - জীবন-ইতিহাস পাঠ অপরিহার্য।
বিশাখার গুণের তালিকা তৈরি করো
|
** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।
তুমি বিশাখার যে যে মানবীয় গুণের তালিকা তৈরি করেছ তার মধ্যে কোন গুণগুলো তুমি পালন করতে চাও এবং কীভাবে পালন করবে তা লেখো।
যে গুণগুলো পালন/চর্চা করতে চাই | কীভাবে পালন/চর্চা করব |
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।
তুমি বিশাখার যে মানবীয় গুণের তালিকা তৈরি করেছ তার মধ্যে কোন গুণগুলো তুমি তোমার পরিবারে সদস্য/ সহপাঠীদের পালন বা চর্চা করতে উদ্বুদ্ধ করবে এবং কীভাবে উদ্বুদ্ধ করবে তা লেখো।
যে গুণগুলো পালন/চর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে চাই | কীভাবে পালন/চর্চায় উদ্বুদ্ধ করব |
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।
** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।
ফিরে দেখা: নিচের তালিকার সকল কাজ কি আমরা শেষ করেছি? হ্যাঁ হলে হ্যাঁ ঘরে এবং না হলে না এর ঘরে (✔) চিহ্ন দাও।
অংশগ্রহণমূলক কাজ নং | সম্পূর্ণ করেছি | |
হ্যাঁ | না | |
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
আরও দেখুন...